SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK

ধর্মীয় অনুশাসন পালনে তথা ইবাদতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা একান্ত আবশ্যক। ইবাদত অনুষ্ঠানের মূল কথা আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হতে হবে। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে সালাত, সাওম, হজ ও যাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতগুলোও ইবাদত হিসেবে গণ্য না-ও হতে পারে, যদি ঐ ইবাদতকারীর নিয়ত অসৎ ও আল্লাহবিমুখ হয় ।

আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য যে বিশেষ যোগ্যতা ও অনুশীলনের প্রয়োজন, তা গড়ে তোলে সালাত। সালাতের বহুমুখী শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করতে পারলে অন্যান্য ইবাদত ও সৎকর্ম পালন করা সহজ হয়ে ওঠে। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সামনে চরম ও পরম দাসত্বের প্রমাণ দেওয়া হয়। বিনয় ও বিনম্রতার চরম পরীক্ষার প্রমাণ পায় ৷ সালাত হচ্ছে মুমিনের মিরাজ, আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের উপায়। সালাত যেমন পাপ মুক্ত করে, তেমনি চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করে ।

পক্ষান্তরে সালাতে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে, লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই সালাতের কোনো মূল্য নেই। এই ধরনের সালাতের কোনো উপকারিতা নেই ৷

ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা একান্ত সহজাত। এ সম্পদ প্রীতি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যেকোনো বৈধ-অবৈধ পথে সম্পদ অর্জন করতে চায়। এই সম্পদে সমাজের কোনো কল্যাণ হয় না। যাকাত ব্যবস্থার প্রধান গুরুত্ব হচ্ছে, যাকাত বিধান মানুষের মন মানসিকতার অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধন করে। “সম্পদের মালিকানা আল্লাহর” এই ভাবধারার বাস্তব প্রমাণ ঘটে যাকাতে। সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ। তার বিধান অনুযায়ী সম্পদ বিতরণ করতে হবে সমাজের গরিব শ্রেণির মানুষের মধ্যে। মানুষের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এতে হৃদয়-মন থেকে কৃপণতা দূর হয়। যাকাত দানে যেমন সম্পদ পবিত্ৰ হয়, তেমনি ব্যক্তি ও সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি দূর হয়। ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন তথা সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। সমাজে আর্থিক নিরাপত্তা ও ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। যাকাত দিতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আর্থিক কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে। দানশীলতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থাকলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

সাওম পালন বা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের পাশবিকতার দমন এবং সৎ প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটে। সাওম পালনে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায়। সাওমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করা। এতে সবর, সহানুভূতি ও সমবেদনার অনুশীলন হয়। সাওম হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের নৈতিকতার অনুশীলন ও পরিচর্যা।

মিথ্যা, অসৎকাজ ও অসৎচিন্তা ত্যাগ না করলে আল্লাহর কাছে সাওম কবুল হয় না।

আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ককে মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যম হচ্ছে হজ। একজন আল্লাহ প্রেমিক বান্দা মায়াময় জগতের আকর্ষণ ছিন্ন করে আল্লাহর সান্নিধ্যে ছুটে যায়। ‘আল্লাহ আমি হাজির, আল্লাহ আমি হাজির' বলতে বলতে আল্লাহর ঘরের দোর গোড়ায় উপনীত হয়; আল্লাহ প্রেমে সিক্ত হয়ে অন্তরের আকুল প্রার্থনা জানায়। “আমি হাজির তোমার কাছে, আল্লাহ! আমি হাজির তোমার কাছে, সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, মালিকানা ও সার্বিক ক্ষমতা তোমারই। তোমার কোনো অংশীদার নেই।”

হজের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে। আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি ভরসা ও আত্মত্যাগের মহান শিক্ষা নিহিত রয়েছে হজের প্রতিটি কাজে। কলহমুক্ত বিশ্ব সমাজ গঠন, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও আন্তর্জাতিক সমঝোতা সৃষ্টিতে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজ বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন। এর মাধ্যমে মহানবি (স) সাহাবা কেরাম ও পূর্ববর্তী নবিগণের স্মৃতি ও কীর্তির সাথে পরিচয় ঘটে। আবার এই হজ পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে হজের সুফল পাওয়া যায় না ৷

এতে প্রতীয়মান হয় যে, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। অতএব আমরা পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো যথাযথভাবে পালন করব ।

Content added || updated By